গল্প হলেও সত্যি
ঘটনাটি যাঁর, তিনি আজ আর আমাদের মধ্যে নেই, তাঁর আঠাশতম মৃত্যু বার্ষিকীতে একটি ছোট্ট স্মৃতিচারণার মধ্যে দিয়ে তাঁকে সম্মান জানালাম আমরা গোটা পরিবার ও তাঁর সুযোগ্যা কন্যা শ্রীমতি রীতা বসু মহাশয়া।
প্রায় ষাট বছর আগের কথা। গড়িয়া ছাড়িয়ে নাকতলা. কলকাতা -৪৭ বললেও আসলে একটি উন্নত গ্রাম। সেখানে একতলা নিজের তৈরি বাড়িতে আমরা থাকতাম,মানে আমার বাবা,মা,আমি, দাদা,ঠাকুমা, পিসি আর কাকু। সদ্য প্রয়াত হয়েছেন ঠাকুর দা,একজন প্রকৃত স্বাধীনতা সংগ্রামী, শ্রী কিশোরীমোহন চট্টোপাধ্যায়.
৷৷৷৷৷৷ আমার বাবার খুব নেশা ছিল বাগানের। একতলা বাড়ি, কিন্তু বিশাল বাগান। সবরকম ফুল আর সবজির সৌরভে সারাক্ষণ বাগানটি ম ম করতো।অফিস আর বাগান, এ দুটোই ছিল বাবার প্রাণ।
৷৷৷৷৷৷ তখন ছিল শীতকাল। রাতে আমরা সবাই ঘুমোচ্ছি। আমার তখন বয়স তিন/চার মাস,আমি বড় হয়ে সবটাই মায়ের কাছে শুনেছি। বাবার নাকি হঠাৎ একটা আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। বারান্দায় বেরিয়ে দেখেন, কে যেন গেটের ওপার থেকে পট পট করে সমস্ত ফুলগাছ গুলো ছিঁড়ে নিচ্ছে। ওই দেখে বাবা আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চাদর জড়িয়ে একটা লাঠি নিয়ে বেরিয়ে দেখলেন লোকটাও পালিয়ে যাচ্ছে। বাবা ঐ কাঠের গেট একলাফে টপকে লোকটাকে ফলো করলেন।
এদিকে ঘরের ছিটকিনি খোলার আওয়াজে আমার পিসির ঘুম গেল ভেঙে। বাবাকে লাঠি নিয়ে দৌড়াতে দেখে পিসি বুঝলেন, অলৌকিক কিছু ঘটেছে। তিনি গেট খুলে বাবার পেছনে “দাদা দাদা”, ডাক দিতে দিতে ছুটলেন। বাবা লোকটার পেছনে যত ছুটছেন,ততই যেন দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছিল. বাবা তার কাছাকাছি যেতেই পারছিলেন না। এইভাবে কিছু ক্ষণ পরে লোকটি গঙ্গার পাড়ে এসে বাঁদিকের কাঠের পুলের ওপর উঠলো। তাই দেখে বাবাও সম্মোহনী জালে আটকে পড়ে বাঁদিকে ঘুরে পুলে উঠতে যাবেন,তখনই পিসির সেই আর্তচিৎকার তাঁর কানে এল,দাদা,আ আ……।
ব্যাস, ওই চিৎকারেই বাবার চেতনা ফিরে এল। তিনি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন, সারা শরীর দিয়ে দরদরিয়ে ঘাম ঝরছে। পিসি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন, বাবা হাতের তর্জনী দিয়ে লোকটাকে দেখালেন, কিন্তু পিসি কাউকে দেখতে পেলেন না। বাড়ি ফিরতে দেখা গেল,একটা গাছেরও ফুল ছেঁড়া হয়নি। সমস্ত বাগান অক্ষত।
৷৷৷৷৷ কে এসেছিল শীতের রাতে? কার পিছু নিয়ে ছিলেন বাবা? লোকটির উদ্দেশ্য কি ছিলো? আজও কেউ তার উত্তর জানেনা।
Source: https://www.facebook.com/kalamerghar/posts/359764648753611