জলদস্যুর পাল্লায় ভূতনাথ ।।(ধারাবাহিক)-অশোক দাস ।।
কি ভাবে এবং কেমন করে জানি ভুতনাথ বাবু জড়িয়ে গেলেন । জড়ালেন তো জড়ালেন এমন এক ক্ষপড়ে গিয়ে পড়লেন ,যে ভাবে কুল-কিনারা কিছুই ঠাহর করতে পারলেন না । প্রথমে, তাঁর যেমন স্বভাব ,নতুন মানুষের সাথে আলাপ ,বন্ধুত্ব করা ,,সুখ-দুঃখের গল্প করা ,একটু কোয়ালিটি টাইম যাপন করা । না, মানে, সারা জীবন তো সেই,,,একরাশ অভাব আর অনটনের তাড়া খেতে খেতে, বয়স গিয়ে থেকেছে এই মধ্য পঞ্চাশের দরজায় ; তার উপর,,ঘটকলি মত এক মহা বিদঘুটে সাগরেদ !যাকে পই পই করে শিখিয়ে ,বললেও-দান দিকটা ,,বা দিক আর উপর তা নীচে গিয়েই থামে । এককথায় উদর-পিন্ডি ,বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে, রাখে। কিছু বললেই হয়েছে–সেই কানে কম শোনা, চোখে কম দেখা ,,বাবুর গায়ে যেন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ভিম সেনের তেজ এসে যায় । গলার স্বর ,,মুটেপাড়া থেকে মুসৌরি পর্যন্ত শোনা যায়!..আর তর্ক?..আহা, যেন দুর্যোধন আর ভীমের বাক্য বিনিময় চলছে কুরুক্ষেত্রের রণভূমিতে !….যারপর নাই ,এক অপার আনন্দে ,মজা লোটে,, লেকগার্ডেন্স এর বর্ধিষ্ণু ফ্ল্যাটের গা ঘেঁষে থাকা সুবিস্তৃত বস্তি অঞ্চল। মায় সেই সুপ্রমার্কেট অঞ্চল ।
এরই মাঝে ,হঠাৎ একদিন ,ঝড়ো কাকের মতো ,,উদয় হয়েছিল ,সবজান্তা গামছাবালা,,সংগবাদিক,,। হ্যাঁ, সংগবাদিক। ভীষনই কুঁড়ে, পাক্কা নেশাখোর আর মূর্খ, বিটকেল,, বখাটে লোচনের গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে যাওয়া বন্ধু ,,অভয়। এই এক আশ্চর্যতম বস্তু। কিছুতেই কোন চ্যানেল, সংবাদ পত্র কিংবা ছোটখাটো কোথাও লেখেই নি, কেউ ওকে সাংবাদিকতার চাকরিটা দেয়নি,, অথচ নিজেকে ,,বিবি,সি, র বাবা মনে করে । এমন তার বক্তিমের ধরন,,-মাঝে মাঝে ভুতনাথ বাবুর মবে হয় এক ঝাপার মেরে ওর ওই থ্যাবরা মুখটা আরও থেবরে দিতে। কিন্তু, তবুও, আপাত ভাবে রাজি, বদমেজাজি হলেও, ভুতনাথ বাবুর দয়ার শরীর । মনটা ভীষন নরম । গালমন্দ করলেও,, পরক্ষণেই ,নিজেই কেঁদে ফেলেন ।নিজেই একটা গীতা সিগারেট হাতে গুঁজে দিয়ে বলেন-“তোমাকে বলছি না, একটু ধৈর্য ধরো। হবে। তুমি পারবে । কেন বোঝ না?”আমায় দেখ,,আমি কি পেয়েছি?…অথচ,,কি কি পেয়ে পারতাম !.সেই থ্যাবরা মুখো অভয়ের সাথেই এসে ছিল এক দেশি সাহেব ।পরনে বিদেশি কোট-প্যান্ট, গায়ের রঙ ,সাহেবদের মতোই, মুখে একটা ,,উটমকুমারী হাসি। চোখে দামি চশমা ।,,অভয়, আলাপ করিয়ে দিয়েছিল—“এই হলেন আমার দাদা, দ্য জিনিয়াস, মাস্টারপিস,,,। আর্টিস্ট, মিউনিসিয়ান ,স্কাল্পচারিস্ট, ট্রেকার, সারভিসিভাল ট্রেইনার,,কি নয়?’..আর ইনি হলেন,,,জলধর বাবু। দকজন প্রখ্যাত নির্দেশক, প্রযোজক,অভিনেতা এবং ব্যবসায়ী । প্রথম আলাপে ,,নতুন বন্ধুর সাথে অল্প বেশ ভালোই জমে গেছিল,,শীতলের দু’টাকার চা আর সিগারেট দিয়ে । তারপর, ক্রমশঃ, আলাপ বাড়তে লাগলো। বন্ধুত্ব আরো ঘNইভুত হতে থাকলো । একদিন বেশ তৃনউৎ করে আলাপ করার জন্য ,,সন্ধ্যে বেলার নিমন্ত্রণ হলো। আয়োজনে থাকলো ,,ভুতনাথবাবুর প্রিয় সমস্ত পদ,যা কিনা কোথাও পাওয়া দুষ্কর । সঙ্গে সূরা । আহা । তারপর,,ক্রমশঃ,, বাড়তে থাকলো, শুধু বন্ধুত্ব নয়। বন্ধুত্বের দাবি দাওয়া । এমনিতেই ভুতনাথবাবু কারো দুঃখ,কষ্ট সহ্য করবে পারেন না, তার ওপর যদি হয় বিশেষ বন্ধু !….বন্ধুত্বের ধার এত ধারালো হয়ে উঠলো,, যে ,,অবশেষে,, দ্বার বন্ধ করার উপক্রম !
মানে, ভুতনাথ বাবু,, বেশ কিছু বিষয়ে ভাবতে বাধ্য হলেন-..কি ঘটছে? কেন ? একটা মানুষ কেন বারবার ,,হার স্বীকার করে নিচ্ছে । আর ধার বাড়িয়ে চলেছে ?..আজ ছেলের, কসল বৌয়ের, পরশু নিজের,, তারপরের দিন বাড়িওয়ালার,,ফোনের, ইলেক্ট্রিকের ,,হোটেলের ,বাসের,, সব ,,সব দায় কি তাঁর?..অবশ্য ততদিনে ,তিনি জানতে পেরেছেন,,,ভদ্রলোক সুন্দর বনের বাদিন্দা! এক মাঝরাতে , হঠাৎ তার মাথায় বিদ্যুত খেলার মতো অঙ্কটা মিলে গেল। তিনি ফস করে সিগারেট জ্বালিয়ে ,,ছাদে গেলেন,, ফ্লাক্সের চা ,নিয়ে। আকাশের দিকে চোখ রাখতেই,,,এক দারুন নৈসর্গিকতায় মন ভরে গেল। এতক্ষনে যে চাপা ক্রোধ ,,বুকে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিচ্ছিল। তা কমে গিয়ে ,এক প্রশান্তি নেমে এলো। অভয় তাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই !কত টুকুই বা বয়স ? সেই কোন ছেলে বেলা থেকে,,লড়ছে ,,কিন্তু এ পৃথিবীতে, বিশেষত ভারতবর্ষে, বলাভসল কলকাতায়,,নিম্নবিত্ত পরিবারের উচ্চাকনখা ও প্রতিভার কোন মর্যাদা রক্ষা বা প্রতিষ্ঠা পাওয়া,,শিবের বাবার অসাধ্য তো ,,বেচারা করবেই বা কি??(ক্রমশঃ)